আমড়া, কামরাঙ্গা চাষাবাদ কৌশল

এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | | NCTB BOOK
2

আমড়া চাষাবাদ (Hog plurn )

বাংলাদেশের একটি অতি পরিচিত টক ফল আমড়া। আমড়া অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল। এতে প্রচুর ভিটামিন এ, বি, লৌহ, ক্যালসিয়াম ও খনিজ লবণ আছে। বাংলাদেশে বরিশালের আমড়া প্রসিদ্ধ । এটা আমের স্বগোত্রীয় ফল দেখতে অনেকটা ছোট আকারের আমের মত । এটা বাংলাদেশ- ভারত অঞ্চলের ফল, পত্র পতনশীল গাছ এবং এর চাষাবাদও খুব কঠিন নয় । সহজেই বীজ থেকে চারা উৎপাদান ও চাষ করা যায় ।

আমড়া চাষের জন্য মাটি ও জমি নির্বাচন

প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং পানি নিকাশের ব্যবস্থা ভাল থাকলে যে কোন ধরনের মাটিতেই আমড়া চাষ করা যায় । তবে আর্দ্রতাপূর্ণ পেঁয়াশ মাটি আমড়া চাষের জন্য উত্তম । মাটিতে পানি দাঁড়ানো অবস্থা সহ্য করতে পারে না । পানি জমলে জমি উঁচু বা নিচু যে ধরনেরই হোক তাতে কোন অসুবিধা হয় না । খোলামেলা বা আংশিক ছায়াযুক্ত জমিতে আমড়া চাষ করা যায় ।

গাছ রোপণের জন্য জমি ও গর্ত তৈরি পদ্ধতি

বর্ষার পূর্বে অথাৎ মার্চ-এপ্রিল মাসে ৭৫ সে:মি:×৭৫ সে.মি, ৭৫ সে.মি. আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে । দুই সারির মাঝখান দিয়ে নালা তৈরি করে নালার মাটি গাছের সারিতে উঠিয়ে দিলে উঁচু বেডের মত হবে। এতে গাছের গোড়ায় পানি দাঁড়াতে পারবে না। চারা রোপণের ২ থেকে ৩ সপ্তাহ আগে নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্ত করতে হবে । প্রতি গর্তে উপরের মাটির সাথে ১৫-২০ কেজি গোবর সার ও ১ কেজি কাঠের ছাই মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে ।

চারা রোপণের দূরত্ব (Spacing of Planting)

পরস্পর দুটি চারার ও সারির মধ্যে দূরত্ব থাকবে ৮ থেকে ১০ মিটার

চারা রোপণের সময় (Time of planting)

জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় । বৃষ্টিপাত বেশি হলে ও পানি নিকাশের ভালো ব্যবস্থা থাকলে চারা লাগানো যায় ।

চারা রোপণ পদ্ধতি (Method of planting )

চারার বৃদ্ধি ও ভালো ফলনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার মিশিয়ে গর্ত ভরাট করার ২-৩ সপ্তাহ পরে নির্দিষ্ট গর্তের মাঝখানে চারা লাগাতে হবে । চারা লাগানোর পর চারার সারি উঁচু বেড আকারে না থাকলে গোড়ার মাটি উঁচু করে দিতে হবে। তবে জমির সমতল হতে চারা লাগানোর স্থান ৩০-৪০ সে:মি: উঁচু হলে ভালো হয় ।

সার প্রয়োগের কলা কৌশল

দেশি আমড়া গাছে সার দেওয়ার প্রচলন নাই, তবে বিলাতি আমড়ায় কিছু সারের চাহিদা আছে । চারার বৃদ্ধি ও ভাল ফলনের জন্য বর্ষার আগে গাছ প্রতি ১৫-২০ কেজি গোবর ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়। নিচে উল্লেখিত পরিমাণ সার সমান দু'ভাগে ভাগ করে দুবারে প্রয়োগ করতে হবে।

ছক: আমড়া গাছে সার প্রয়োগের পরিমাণ (কেজি/গ্রামএমপি

সারের নাম

প্রতি বছর গাছ প্রতি সারের পরিমাণ

পূৰ্ণ বয়ক ফলত গাছ প্রতি সারের পরিমাণ

গোবর সার১৫-২০ কেজি৩০-৪০ কেজি
ইউরিয়া১০০ গ্রাম১০০০ গ্রাম
টিএসপি১০০ গ্রাম৮০০ গ্রাম
এমপি১০০ গ্রাম৬০০ গ্রাম

রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা

আমড়ার চারা অত্যন্ত নরম। তাই ঝড়ে যাতে ভেঙে যেতে না পারে সেজন্য চারা রোপণের পর বাঁশের খুটি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। আম গাছের মত আমড়া গাছে অসম বা একান্তর ভাবে ফলন দেখা যায়। অর্থাৎ এক বছর ফলন বেশি হলে পরের বছর ফলন কম দেয় । যে বছর ফলন বেশি হয় সে সময় ছোট অবস্থায় কিছু ফল পেড়ে ফল পাতলা করে দিতে হয়। এতে অবশিষ্ট ফল বড় হয় এবং একান্তর ফলন কিছুটা রোধ হয়। এছাড়া ফল শেষ হয়ে গেলে শুকনো ও রোগাক্রান্ত ডাল ছেটে দিতে হয়। গাছের নিচের জমি আগাছামুক্ত ও মাটি নরম রাখার জন্য বাগানের ফাকা জায়গায় আদা, হলুদ, চাষ করা যায় । বড় গাছে তেমন সেচের প্রয়োজন হয় না । চারা ছোট অবস্থায় এবং সার প্রয়োগের পর বৃষ্টি না হলে সেচ দেওয়া প্রয়োজন ।

পোকা মাকড় ও রোগ বালাই দমন কৌশল

আমড়া গাছের শত্রু কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা। এই পাকা গাছের কাঠ সমেত নরম অংশ খেয়ে ফেলে এবং গর্ত করে দেয় । এই গর্তে বর্ষার জল ঢুকে পচন শুরু হয় এবং নরম ডালপালা সহজেই ভেঙে যায়। এই পোকার মল দেখে সহজেই চেনা যায়। প্রতিকার হিসাবে লোহার শলাকা দিয়ে পোকা বের করে মারা হয় । এছাড়া ৫০% বি.এইচ সি গুলে গর্তে ঢেলে দিয়ে গর্তের মুখ সিমেন্ট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাঝে মাঝে ডাল শুকা রোগ (Die back) আক্রান্ত হয় । এছাড়া তেমন রোগ চোখে পড়ে না ।

ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষন কৌশল

দেশি আমড়া গাছে ৫-৭ বছরে এবং বিলাতি আমড়া গাছে আরো আগে ফল ধরা শুরু করে। ফেব্রুয়ারি - মার্চ মাসে মুকুল আসে এবং জুলাই-আগষ্ট মাসে ফল পাকে। দেশি আমড়া ছোট অবস্থায় তোলা যায় এবং চাটনি খাওয়া যায় । ফল পুষ্ট হলে গায়ের চামড়া টান টান হয় এবং বোটার দিকে হালকা সবুজ বা হালকা হলদে ভাব হয় । ডাসা অবস্থায় ফল পাড়া হয়। পরিপুষ্ট ফল পেড়ে বড় ছোট গ্রেডিং করে বাজারজাত করা হয় । ঠান্ডা পরিবেশে এবং আলো বাতাস চলাচলের সুবিধাজনক স্থানে এক সপ্তাহের বেশি সময় রাখা যায়। গরম বা বন্ধ স্থানে রাখলে তাড়াতাড়ি পেকে যায়। স্বাভাবিক ঠান্ডা ঘরে সংরক্ষণ করলে মাঝে মাঝে হালকা পানির ছিটা দিলে ফল সতেজ থাকে ।

ফল সংরক্ষণ (Fruit preservation): ভঁসা ফল পেড়ে মিষ্টি আচার তৈরি করে অনেক দিন রাখা যায় । কবিরাজেরা আমের মত আমড়া সত্ত্ব করে রাখেন বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য । একটি আমড়া গাছ ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত বছরে ২০০-৩০০ কেজি ফল দেয় ।

কামরাঙ্গা (Carambola) চাষাবাদ কৌশল

অম্লমধুর স্বাদযুক্ত কামরাঙ্গা ফল আমাদের কাছে খুবই পরিচিত । কাচা ফল টক পাকলে কিছুটা মিষ্টি। সারা বাংলাদেশে এই ফল গাছে দেখতে পাওয়া যায়। ব্যবসায়িক ভাবে কামরাঙ্গা চাষ তেমন লাভজনক নয় তবে অনেকে বাগানে বা বাড়ির আশে পাশে গাছ লাগিয়ে থাকেন। এই ফলে প্রচুর ভিটামিন এ ও সি এবং বি, বি২, ক্যালসিয়াম, লৌহ ও খনিজ লবণ আছে। কবিরাজী মতে পাকা ফল শীতল, বাতনাশক, অর্শরোগে উপকারী রুচিকর ও পুষ্টিকর । এই ফল খাওয়া উপকারী । বর্তমানে হাইব্রিড মিষ্টি জাতের কামরাঙ্গা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

মাটি ও জমি নির্বাচন

হালকা দোঁআশ মাটি কামরাঙ্গা চাষের জন্য উত্তম হলেও পানি নিষ্কাশন ও সেচের সুবিধাযুক্ত প্রায় সব ধরনের মাটিতেই এর চাষ করা যায় । বালি মাটিতে এই ফলের চাষ করা অসুবিধাজনক পানি না জমলে জমি উঁচু বা নিচু যে ধরনে হাকে তাতে কোন অসুবিধা হয় না । খোলামেলা বা আংশিক ছায়াযুক্ত জমিতে কামরাঙ্গা চাষ করা যায়।

চারা রোপণের জন্য জমি ও গর্ত তৈরি এবং সার প্রয়োগ পদ্ধতি

বর্ষার পূর্বে অথাৎ মার্চ-এপ্রিল মাসে জমিতে কয়েক বার চাষ দিয়ে জমির আগাছা পরিস্কার করে চারা রোপণের জন্য গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের মাপ হবে ৭৫ সে: মি: × ৭৫ সে:মি:×৭৫ সে:মি:। প্রতি গর্তে ১৫-২০ কেজি গাবর সার ১ কেজি কাঠের ছাই, ৫০০ গ্রাম হাড়ের গুড়া, ঝুরা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে রাখতে হবে । গর্ত গাছের রোপণের ২০-২৫ দিনে পূর্বে করতে হবে ।

চারা রোপণ পদ্ধতি (Method of Planting)

গর্তের মাঝখানে চারা বসিয়ে গোড়ার মাটি একটু উঁচু করে দিতে হবে । একটা শক্ত কাঠির সঙ্গে বেঁধে দিয়ে নরম চারাকে দাঁড়াতে সাহায্য করতে হবে । তারপর পানি সেচ দিতে হবে ।

চারা রোপণের সময় (Tine of planting): বর্ষা কালে অর্থাৎ মার্চ - এপ্রিল মাসে চারা রোপণ করা হয়।

চারা রোপণের দূরত্ব (Spacing of Planting): পরস্পর গাছ ও সারির দূরত্ব থাকবে ৪-৫ মিটার।

রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা

সার প্রয়োগ (গবহরহম) ও সার প্রয়োগে ফলন ভালো ও ফলের মান উন্নত হয়। এ জন্য বর্ষার আগে প্রতি বছর গাছ প্রতি ১৫-২০ কেজি গোবর সার বা খামার সার, ১ কেজি কাঠের ছাই, ১ কেজি সরিষার খৈল গোড়ার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে। চারা ছোট অবস্থায় সার কিছুটা কম দিয়ে গাছকে সবল করে তুলতে হবে । বড় গাছে বর্ষার শুরুতে ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি এনপিকে বা সুফলা ( ১৫:১৫:১৫ ) প্রয়োগে বেশি ফলন পাওয়া যাবে । ভাল ফলনের জন্য বয়ক গাছে বর্ষার আগেও পরে দুই দফায় সার দেওয়া দরকার। প্রথমে বর্ষার আগে ছকে দেখানো সারের অর্ধেক ও বর্ষার পরে বাকি অর্ধেক সার ছিটিয়ে গাছের গোড়ার মাটি কুপিয়ে প্রয়োগ করতে হবে ।

ছক- বয়ক (ফলন্ত) কামরাঙ্গা গাছে সার প্রয়োগের পরিমাণ

সারের নাম

প্রতি বছর গাছ প্রতি সারের পরিমাণ

গোবর সার৪০ কেজি
ইউরিয়া১ কেজি
টিএসপি১.৫ কেজি
এমপি১.০ কেজি

সেচ (Irrigation): বড় গাছের সেচের বিশেষ প্রয়োজন হয় না । চারা অবস্থায় গরমকালে ও সার প্রয়োগের পর সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। চারার প্রথম অবস্থায় প্রতি মাসে নিয়মিত একবার সেচ দিতে হবে।

ছাঁটাই: ভালো ফলন পেতে যত্ন ও পরিচর্যা প্রয়োজন । ফল শেষ হয়ে গেলে হালকা ভাবে ডাল ছাঁটাই করে গাছের আকৃতি সুন্দর করতে হয় । গাছ বড় হয়ে গেলে গাছের নিচে ঘন ছায়া হওয়ার জন্য সাথী ফসলের চাষে অসুবিধা সৃষ্টি করে ।

পোকা মাকড় ও রোগ বালাই দমন কৌশল

এই গাছে তেমন রোগ ও পোকা নেই বললেই চলে । ফল পাকলে বা পাকতে শুরু করলে বাদুর, কাঠবিড়ালির অত্যাচার শুরু হয় । কাঁচা অবস্থায় টিয়াপাখি কঁচা ফল কেটে নিচে ফেলে বিনষ্ট করে ।

ফল সংগ্রহ ও সরক্ষণ পদ্ধতি

বীজের গাছে ৩-৪ বছরের মধ্যে ফুল আসলেও ভালো ফলন ৫-৬ বছরের আগে হয় না। কলমের গাছে ১ বছরের মধ্যে ফুল ধরে । সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এবং জানুয়ারি - ফেব্রুয়ারি মাসে ফল পাকে । ফল পুষ্ট হলেই পাড়া হয় । পুষ্ট ফলের রং ইষৎ হলদে হয় এবং শিরাগুলির গভীরতা কমে পরিপূর্ণ হয়ে যায় । পাড়া ফল রেখে দিলে কয়েকদিনের মধ্যেই পেকে যায় । প্রতিটি পুর্ন বয়স্ক গাছ হতে বছরে ৬০০-৮০০ টি ফল পাওয়া যায় ।

ফল সংরক্ষণ: পাকা ফলের রস থেকে জেলি তৈরি করা যায় এবং এই জেলি বেশ সুস্বাদু হয় । এছাড়া মুখরোচক আচার তৈরি হয় ।

Content added || updated By

প্রশ্নমালা

0

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১। আমড়া ফলে বিদ্যমান ভিটামিন ও খনিজ পদার্থগুলো কি কি ? 

২। আমড়া গাছ রোপণের উপযুক্ত সময় কখন ? 

৩ । আমড়া গাছের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা দমনে কি ঔষধ ব্যবহার করা হয় ? 

৪ । কামরাঙ্গা গাছ রোপণের জন্য গর্তের মাপ কত হবে ? 

৫ । ফলন্ত কামরাঙ্গা গাছ প্রতি গোবর, টিএসপি এবং এমপি সারের প্রয়োগ মান কত ? 

৬। কামরাঙ্গা কি কি রোগ উপশমে ব্যবহার করা হয় ? 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১। কামরাঙ্গা চাষে জমি ও মাটির চাহিদা লেখ । 

২। কামরাঙ্গা গাছে সার প্রয়োগে কৌশল বর্ণনা করা । 

৩ । আমড়ার রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা সম্পর্কে লেখ। 

৪ । কামরাঙ্গার ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ সম্পর্কে লেখ । 

রচনামূলক প্রশ্ন 

১ । আমড়ার চাষাবাদ কৌশল বর্ণনা কর । 

২। কামরাঙ্গার চাষে জমি নির্বাচন, জমি তৈরি, গর্ত খনন, সার প্রয়োগ ও অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা সম্পর্কে লেখ ।

Content added || updated By
Promotion